একজন আদর্শ স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য

একজন আদর্শ স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য
একজন আদর্শ স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য

নিজের স্বামী যখন অন্য নারীর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকায় তখন
আমারও ইচ্ছে করে, সারাদিনের সংসারী বাদ দিয়ে একটু আয়নার
সামনে দাঁড়াতে।
অনেক দিন পর নিজেকে বেশ মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করি।
ত্বকে সেই ধবধবে সাদা বর্ন আর নেই। কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে
চামড়া। কপালে গালে বেশ অনেকগুলো ব্রন। আমার এখনো মনে
আছে যখন মুখে প্রথম একটা ব্রন উঠেছিল, আতংকে আমি সারারাত
ঘুমোইনি। ব্রনটা দূর করার কত চেষ্টা! আর এখন? সংসারের এত
ব্যস্ততার মধ্যে সামান্য একটা ব্রন নিয়ে ভাবার সময় কোথায়।
স্বামীর আফটার সেভ লোশনটা এগিয়ে দিতে ভুল না করা আমি
নিজের মুখে একটু ক্রিম লাগানোর সময় পাইনা। আজ মুখে একটু
পাউডার লাগাতে গিয়েও থেমে গেলাম।
ইচ্ছে করছে না।
কাজল পড়তে গিয়ে দেখলাম চোখের নিচটা এমনিতেই কালো
হয়ে গেছে। ছোট মেয়েটা রাতে একদম ঘুমোতে চায় না। ওকে
নিয়ে ‌জেগে থাকতে হয়। ভাসা ভাসা চোখ গুলো বেশ অনেকটাই
ভেতরে ঢুকে গেছে। কাজল আর পড়লাম না।
ইচ্ছে করছে না।
কড়কড়ে শুকনো ঠোঁটে লিপস্টিক ছোঁয়াতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম
একসময়ের সেই গোলাপী ঠোঁট এখন আর নেই। সকাল থেকে সন্ধ্যা
পর্যন্ত স্বামী সন্তানের প্রতিটা কাজের হিসেব রাখতে গিয়ে
আমি নিজের ব্যাপারেই বড্ড বেহিসেবি হয়ে গিয়েছি।
লিপস্টিকটাও রেখে দিলাম।
ইচ্ছে করছে না।
নেইল পলিশটা হাতে নিয়ে নখে ছোঁয়াতে ‌গিয়েও থেমে গেলাম।
সেই শুভ্র নখ আর নেই। প্রতিদিন মাছ মাংস তরকারি কাটতে
কাটতে বিবর্ন হয়ে গিয়েছে। নেইলপলিশটাও রেখে দিলাম। ইচ্ছে
করছে না।
খোঁপাটা খুলে দিলাম। একসময় যে চুলগুলো কোমর সমান লম্বা
ছিল, লম্বা এখনও আছে তবে নেই সেই কালো ঝলমলে ভাব। মোটা
গোছাটাও এখন আর নেই। প্রচুর চুল পড়ছে। নিজের চুলের যত্ন নিতে
না পারলেও স্বামীর দু এক গোছা সাদা চুলে কিন্তু আমিই প্রলেপ
দিয়ে দেই। আজ চুলে চিরুনী চালাতে গিয়ে দেখলাম বেশ জট
ধরেছে। চিরুনীটাও রেখে দিলাম।
ইচ্ছে করছে না।
বিক্ষিপ্ত ভাবে শরীরের এধারে ওধারে তাকিয়ে দেখলাম বেশ
অনেকটাই শুকিয়ে গিয়েছি। এক সময় আমি বেছে বেছে খাবার
খেতাম। একটুও যাতে মেদ জমতে না পারে শরীরে এই জন্য ডায়েট
করতাম। এখন আর ওসবের অবকাশ নেই। স্বামীর সকালের নাস্তা
বাচ্চার টিফিন শ্বশুর শ্বাশুড়ির খাবারের পর সময়মতো ওষুধ এমন
হাজারটা দায়িত্ব পালনের পর আমার খাবার সময় হয়। যেই আমি
ছোটবেলা থেকে গরম গরম খাবার খেতে পছন্দ করতাম তাকেই
এখন ঠান্ডা কড়কড়ে ভাত খেতে হয়। একটু আগেও যে আগ্রহ নিয়ে
আয়নায় তাকিয়ে ছিলাম তা ফিকে হয়ে গিয়েছে। আয়নার সামনে
থেকে সরে আসলাম।
ইচ্ছে করছে না।
তানিমের সাথে আমার বিবাহিত জীবনের আজ প্রায় সতের বছর।
বিয়ের আগে প্রেম ছিল আরও তিন বছর। বিশটা বছর ধরে আমি ওই
মানুষটাকে চিনি। চেনা জানার পর্ব চুকে গিয়ে সে আজ অচেনার
কাতারে দাঁড়িয়েছে। বিয়ের প্রথম কয়েক বছর আমাদের জীবনটা
ছিল স্বপ্নের মত। এরপর বড় খোকা কোলে এল। সংসারের
ব্যস্ততা বাড়তে লাগল। আমি নিজের জন্য ফেস প্যাক বানাতে
ভুলে গিয়ে বাচ্চার সুজি রান্না করতেই বেশি সময় দিলাম।
পরিবারের সদস্য সংখ্যা বাড়তে থাকায় বেশ সাশ্রয়ী হলাম। অবশ্য
সাশ্রয়টা কেবল আমার ক্ষেত্রেই। আমি এখন আর ম্যাচিং করে
শাড়ি ব্লাউজ পড়ি না। সপ্তাহে চারবার চুলে শ্যাম্পু করা আমি
এখন একবারেই সন্তুষ্ট থাকি। বাকি সবার সব কিছু কিন্তু আগের
মতই চলছে। তিন বাচ্চার মা হওয়ার পর দেহ মনের লাবন্যতা নিশ্চয়ই
আগের মত থাকে না? তিন বাচ্চার বাবার কিন্তু সে চিন্তা নেই!
তিনি আছেন আগেরই মত। আজ তার পাশে আমি বড্ড বেমানান।
আমায় সাথে নিয়ে কোথাও বেড়োতে তার লজ্জা হয়। আজ
নেহায়েৎ বিপদে পড়েই তানিম আমাকে সাথে নিয়ে বেড়িয়েছিল।
আমার ছোট বোনের বিয়েতে তো আর আমাকে ফেলে যেতে
পারে না! সেখানেই আমি এক নতুন তানিমকে আবিষ্কার করলাম।
পরস্ত্রীর রুপের জয় জয়কার তার মুখে। আমি ছিলাম কেবলই
নিষ্প্রভ। তাই বাসায় ফিরে অনেকদিন পর আজ আয়নার দিকে
তাকিয়েছিলাম। নিজেকে সাজানোর, স্বামীর মনোযোগ
আকর্ষনের ক্ষীন ইচ্ছা হয়ত মনে জেগেছিল। কিন্তু ইচ্ছেগুলো একে
একে মরে গেছে। ঘঁড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ভোর পাঁচটা
বাজে। নামাযটা পড়েই নাস্তা বানাতে হবে। নাহলে তানিম আবার
না খেয়েই অফিস চলে যাবে। বাচ্চাদের স্কুলের জন্য রেডি
করিয়ে দিতে হবে। দুপুরের রান্নাটাও তাড়াতাড়িই শুরু করতে হবে।
এত ব্যস্ত আমি, আমার অত ইচ্ছে করার সময় কোথায়!
দীর্ঘদিন সংসার করার পর একজন স্ত্রীর আর প্রেয়সী সাজা চলে
না। কারন সে একজন মা। ‌সে একজন গৃহিনী। সংসারের প্রান সে।
তার একটু উদাসীনতায় স্বামীর বাহ্যিক সুদর্শন মুখোশটা খসে
পড়তে পারে। অথচ একটা নির্দিষ্ট সময় পরে ঘরের বউয়ের থেকে
স্বামীর আগ্রহটা হারিয়ে যায়। সংসারের স্বার্থে যে স্ত্রী
নিজের সব সাধ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে দেয় তার স্বামীই সেই
আত্মত্যাগটাকে কখনো না কখনো অস্বীকার করেই ফেলে। তবু
কিন্তু সবক্ষেত্রেই সংসারটা থেমে থাকে না। সবকিছু ভুলে গিয়ে
আবারও দৈনন্দিন কাজে সংসার সেজে ওঠে। কারন সংসারের
নেপথ্য কারিগর একজন সর্বংসহা স্ত্রী। একজন স্ত্রী, একজন নারী।
Previous
Next Post »