Hi I'm WriterMosharef
আমি এতটাই অমনোযোগী ছিলাম যে সবার অগোচরে তোমার মুখ থেকে ঐ রুবেল তাকাও এদিকে ডাকটা পর্যন্তও শুনিনি।
কিছুক্ষণ যাবার পর মনে হলো কেউ একজন আমায় ডেকেছে। আমি এদিক সেদিক তাকালাম, উহু কাউকে আবিস্কার করতে পারলাম না।
ক্লাসে আনজু ম্যাডাম প্রবেশ করার সাথেসাথেই কেউ একজন আবার গলা খাকড়ি দিলো। অদ্ভুত! আমার বুকটা ধুক করে উঠলো।
সেই কণ্ঠ, সেই সুমধুর মিষ্টিভাসি গলাটা আঁচ করতে পারলাম।
আমি ম্যামের দিকে না তাকিয়ে বাম পাশের সেই হালকা লাল রং এর বেঞ্চের দিকে তাকালাম। তোমার মুখটা মলিন দেখব আশা করিনি।
অপরাধবোধ জাগলো, এইরে মন খারাপের জন্য বোধহয় আমিই দায়ী।
ফিসফিসিয়ে বললাম...
ঐ...
তুমি আড়চোখে দেখলে, পরক্ষনেই চোখ সরিয়ে নিলে।
বুঝলাম বেশ খারাপ কাজ করেছি বোধহয়। তোমার এই কিঞ্চিত রাগ সেদিন হুট করে আমার মনের সাথে মিশে গিয়েছিল।
আবারো বললাম...
ঐ শুনো..?
হু...?
ডাকছিলে তখন?
উহু না।
তাহলে কে ডাকলো ?
ভুতে ডাকছে তোমায়।
আবারো সেই রাগ, তবে তোমার আড়চোখের নজর কাঁড়তে পেরেছিলাম বোধহয়। নইলে আমার মুচকি হাসিতে ভেংচি কাঁটবে কেন?
কিভাবে দেখলে যে আমি হাসছি?
আমি ম্যামের চোখ ফাঁকি দিয়ে ফিসফিস করে বললাম।
ভুতে নয়, পেত্নীতে ডেকেছিলো।
কি? আমি পেত্নী ?
তোমাকে পেত্নী কখন বললাম ?
কারণ, তোমায় আমিই ডেকেছিলাম।
ওম্মা সত্যিই ?
লজ্জা পেয়ে তুমি জিহ্বায় কামড় দিলে। আমি হাসলাম, তুমি রাগ দেখালে যার অর্থ ঐ হাসবা একদম, গাধা।
তবে আমি বোধহয় সেদিনই তোমার লাজুক মুখটা দেখেছিলাম। লজ্জা পেলে একটা মেয়েকে এতটা সুন্দর লাগে আমি আগে কখনো দেখিনি।
সেই ১০ম শ্রেনীর রোল নং ১৩ এর মেয়েটির লাজুক মুখটা গেথে গিয়েছিলো মনে৷
ঐ মুহূর্তে মনে হয়েছিল ইস আমি যদি কবি হতাম।
ম্যামের ক্লাস শেষে তুমি আমার মুখোমুখি হলে।
রাগমিশ্রিত হাসি মুখ করে বললে ?
সারাটা ক্লাস হাসলে কেন ?
এমনিই।
মিথ্যা বলবানা, তুমি আমায় ভেঙ্গাচ্ছিলে।
মোটেও না, আমি তোমায় ভেঙ্গাবো কেন?
খালি কথায় কথায় প্রশ্ন করে, বাদ দেও। তখন ডাকলাম শুনলেনা কেন?
ঠিকভাবে শুনিনি। তবে পরে মনে হলো কেউ একজন ডেকেছে।
ঢং আচ্ছা ফরহাদ স্যারের ইংরেজি হোমওয়ার্ক করেছো?
না, মনে নেই।
স্যার পিটাবেনে দেইখো আজকে। আচ্ছা খাতাটা দাও।
বলেই তুমি বেঞ্চের উপর থাকা খাতাটা ছো মেরে নিলে।
বেশ অবাক হলাম তখন। লজিক্যাল জিনিসগুলো বুঝতাম না, ঠিক কি কারণে নিলে।
কেনইবা এত চিন্তে৷ কৌতুহল নিয়ে তাকালাম আমি
তুমি তখন তোমার খাতা দেখে আমার খাতায় লিখে দিচ্ছো।
সেই অনুভূতিটা ছিল প্রখর। তবে মনের যে একটা আত্মতৃপ্তি আছে সেটা পেয়েছিলাম খুব করে।
সেই ১০ম শ্রেনীর রোল নং ১৩ এর মেয়েটির মাধ্যমে।
তখন প্রশ্ন জেগেছিল মনে আচ্ছা ভালোবাসা কি ?
ভালোবাসা কাকে বলে?
ভালোবাসার রং কেমন?
নীল নাকি লাল?
হলুন নাকি কালো?
মনে হয় রঙ্গিন।
নিজেকে কিছুক্ষণের জন্য সেই রঙ্গিন জীবনের উপভোগিয় মানুষ মনে করেছিলাম।
ইস!
ফরহাদ স্যার সেদিন আসলই না। আমি কিছু বলার আগেই বললে।
বেঁচে গেলে আজ। স্যার আসেনি।
হোমওয়ার্ক তো করে দিলে স্যার আসলেই বা কি?
এরপর নিজে করবা, অনিয়ম করবানা। স্যাররা খারাপ ভাবে?
তুমি করে দিও এখন থেকে।
আমার ঠ্যাকা পরছে।
ঠিক এই কথাটা শুনে প্রচুর হেসেছিলাম আমি। ভাবছি রাগবে খুব, বলবে পারবনা আমি। অবাক করে দিয়ে বলেছিলো আচ্ছা দিও প্রতিদিন আমিই করে দিবনি।
ঠিক রোজ নিয়ম করে আমার হোমওয়ার্ক করে দিতে তুমি। প্রতিদিন নতুন করে লুফে নিতাম সেই ভালোবাসা গুলো।
চোখ বলতো আমার চেয়ে বোধহয় তুমিই বেশি খুশি। বন্ধুত্ব নাকি ভালোবাসা সেটা আঁচ করতে পারিনি। তবে বুঝেছিলাম আমার কাউকে লাগবে।
তখনকার আবেগ টাই ছিল ভালোবাসা।
নিজের জায়গায় অটল থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম
এই আবেগটাই ধরে রাখব সারাজীবন।
তবে তোমার মনে তখন কি ছিলো জানতাম না।
ফুটবল খেলতে গিয়ে পা মচকে গেলো। সেবার স্কুলে গেলামনা ১ সপ্তাহ। তারপর যেদিন স্কুলে গেলাম হাজার টা প্রশ্নের সম্মুখীন হলাম।
ঐ প্রশ্ন গুলোই সেদিন আমার আবেগময় মস্তিষ্কে জানান দিয়েছিল।
আমার তোমাকে চাই রুবেল। রোজ হোমওয়ার্ক করে
দিতে চাই।
পরিবর্তন হবে কখনো ভাবিনি। ভাবছিলাম আমাদের সম্পর্কটা যেন এমনই থাকে।
কিছু অনুভূতি লুকোনো, কিছু অনুভূতি সবার অগোচরে
উপভোগ করা। কখনো সামনে থেকে এক দৃষ্টিতে দেখা, আহা! অদ্ভুত না?
একদিন হুট করে তোমার মন খারাপ হলো, অস্ফুট সুরে বললে তোমরা শহর ছেরে চলে যাচ্ছো অন্য কোথাও।
আমার দম বন্ধ হয়ে এসেছিলো। কিছু বলতে পারিনি।
তবে বুঝেছিলাম আমার অনুভূতি গুলো ফিকে হয়ে যাবে এবার। আমার নীরবতা বেশ আঁচ করতে
পেরেছিলে। প্রথমবার স্পর্শ করছিলে হাত, আমার তখন কান্না পাচ্ছিলো।
নিজেকে সংযোত রেখেছিলাম তবে। কিছু বলা হলোনা রুবেল, ভালো থেকো আর জায়গাটা রেখো প্লিজ ছোট
কথাটাই ছিল কিশোর বেলা সেই সময়ের যন্ত্রনাদায়ক একটা বাক্য।
পরদিনই চলে গেলে। বেশ একা হয়ে গেলাম আমি।
অনেক অনেক অনেক একাকিত্ব!
মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পাশ করলাম। তোমার বলা কথাটা মনে গেথে আছে। জায়গাটাও রয়ে গেলো।
পাব্লিক ভার্সিটিতে চান্স হলো। ভর্তি হলাম। কালের পরিক্রমায় প্রথম সেমিস্টার গেলো।
দ্বিতীয় সেমিস্টারে উঠলাম। আর লিখতে পারছিনা যে।
ভার্সিটি কিছুদিন বন্ধ। অনেকদিন বাসায় যাওয়া হয়না।
সবকিছু গুছিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ভাগ্য করে জানালার পাশেই সিট পেলাম। বাস চলছে, কানে হেডফোন চোখ বুঝে গান শুনছি।
সাথে শো শো বাতাস। মেসেজ টোন বেঁজে উঠলো।
এই সিম কোম্পানি গুলো সময় পায়না সবমসয় মেসেজ দেয়।
দেখি ভালো কোন অফার দিল কিনা।
মেসেজ অপেন করলাম। চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।
কান থেকে হেডফোন খুললাম। শরীর বেয়ে ঘাম জড়া শুরু করছে। স্ক্রিনে উপর মেসেজটা দেখছি। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।
বুক ধরফর করছে, মেসেজে লেখা।
ঐ কেমন আছো হু? আমার জায়গা আছেতো?
আমায় চিনছো?
আমি সেই ১০ম শ্রেনীর রোল নং ১৩ এর মেয়েটি।