অপরিচিতা


চারদিকে অনেক মানুষের কোলাহল, বাচ্চাদের আনাগোনা, একদল ছেলেমেয়ে অন্যদলের ছেলেময়ের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েছে। হয়তো কেউ তাদের মন মতো টাকা পাচ্ছে না তাই। বিয়ে বাড়িতে এই একটা সমস্যা গেটে ঢুকতে এক প্যাচাল আবার খাওয়া শেষে হাতে ধুতে গেলে এক প্যাচাল। সর্বশেষ কনের ও তার পরিবারের কান্নাকাটি দিয়ে এই বিয়ে নামক অদ্ভুট প্যাচাল সমাপ্ত হয়। উফফ, মানুষ যে কেন বিয়ে করে বুঝে আসে না! 

কথাগুলো বলছে আর বিরক্তবোধ করছে আবির। সে তার বন্ধুর বিয়েতে খুলনা এসেছে। কিন্তু, সে এলেও তার ভালো লাগছে না কারণ সাথে তার মামাতো বোন টিয়া এসেছে যে কি না সূদুর আমেরিকা থেকে এসেছে।

তার বন্ধুর বিয়ে সে এখানে মজমাস্তি করবে তা না সাথে এই উল্লুকটা এসে পড়েছে। 


-এই আবির ভাই তুমি ওখানে একা দাড়িয়ে আছো কেন?  এদিকে এসো। 


হাত নাড়িয়ে আবিরকে ডাকছে টিয়া। কিন্তু, আবিরের এতে কোনো ভাবান্তরই নেই। সে বসে আছে। 

আবিরের এরকম আচরণে টিয়া বেশ কষ্ট পেলো। 

সে কখনো গ্রামের বিয়ে দেখেনি কিন্তু যখন শুনতে পেলো তার আবির ভাই খুলনা যাবে তার বন্ধুর বিয়েতে তখন সে এখানকার বিয়ে দেখার লোভ সামলাতে পারিনি। 

কিন্তু, এখানে আসার পর থেকেই আবির ভাই তার সাথে কেমন যেন ব্যবহার করছে?

সে কাল সকালেই ঢাকায় চলে যাবে। এমন অপরিচিত জায়গায় যার সাথে এসেছে তার এমন ব্যবহার দেখে থাকার কোনো মানেই হয় না। 


বিবাহ পর্ব শেষ হয়েছে এখন কনে সহ বরযাত্রীর যাওয়ার সময় হয়েছে। কনে-বর সহ আমি আর টিয়ে কারে করে আসব আর অন্যান্যরা আসবে অন্য গাড়ি দিয়ে। রাতুল ও তার সদ্য বিয়ে করা স্ত্রী গাড়িতে বসে আছে কিন্তু টিয়া সে এখনো আসছে না কেন?  আমি গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই দেখতে পেলাম একদল মেয়ের সঙ্গে কি যেন ভাগাভাগি করছে। আরেকটু এগুতে দেখতে পেলাম আসলে তারা টাকা ভাগাভাগি করছিল। এই টাকা হয়তো তারা রাতুলের জুতা লুকিয়ে আদায় করেছে। 


আমি টিয়াকে ডাক দিতেই টিয়া সেই মেয়েগুলোকে বিদায় জানিয়ে চলে আসলো।আমি ও টিয়া বের হয়ে গাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। কিন্তু, এখানে হয় আরেক বিপত্তি হঠাৎ কয়েকজন 

আমাদের দিকে এগিয়ে আসে আর এতে আমরা একটু পিছিয়ে পড়ি। আশ্চর্য তো এতবড় রাস্তা খালি থাকতে এখানে গা ঘেঁষে হাটার মানে কি? 


অবশেষে, আমরা রাতুলদের বাড়িতে পৌঁছলাম। সেখানে থেকে রাতের খাওয়াদাওয়া করে রওয়ানা হলাম ঢাকার উদ্দেশ্য। কারণ, আমি জানি এই টিয়া আমার কথায় রেগে আছে আর হয়তো কাল সকালেই সে নিজেই ঢাকায় চলে যেত। 


যেতে যেতে পরদিন সকাল ৯টা বাজলো। এসেই আমি আমার রুমে চলে গেলাম।রুমে ঢুকে কাপড় বদলাতে গিয়ে আমার পাঞ্জাবির পকেটে একটি নুপুর পেলাম সাথে একটি চিরকুট।

আমি তো পুরাই অবাক এই নুপুর আমার পাঞ্জাবির পকেটে এলো কিভাবে? কৌতূহল মেটাতে আমি সেই চিরকুট খুললাম, এবং সেই চিরকুটে লেখা, 


প্রিয় পাঞ্জাবি ওয়ালা, 

নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন আপনার পাঞ্জাবির পকেটে এই নুপুর এলো কিভাবে? 

কিন্তু, কিভাবে আমি আপনাকে এই নুপুর দিলাম তা বলব না। আর শুনুন বিয়ে বাড়িতে এসে কখনো হুতুম পেঁচার মতো বসে থাকবেন না? আপনার মতো মানুষ আমি কখনোই দেখেনি বিশ্বাস করুন যে কি না বিয়ে বাড়িতে এত সুন্দরি মেয়েদের দিকে একটু চোখ ফিরিয়ে তাকায়নি। আমার আপনাকে খুবই পছন্দ হয়েছে বুঝলেন।কিন্তু, সামনাসামনি বলার সাহস নেই তাই আমার একপায়ের নুপুর খুলে আপনাকে দিলাম যদি আপনার আমাকে পছন্দ হয় তবে আমার সামনে এসে আমার খালি পায়ে আবার নাহয় নুপুর পড়িয়ে দিলেন। 


ইতি 

অপরিচিতা 


(আমার মোবাইল নাম্বার চিরকুটের উল্টোপিঠে দেওয়া আছে) 


থম মেরে বসে আছি। একটি মেয়ের কতটুকু দুঃসাহস থাকলে একটি ছেলের পকেটে নুপুর ও প্রেমপত্র দিতে পারে।  


একটা কল তো অবশ্যই দিতে হয়। আবির সে রাতেই কল দিলো চিরকুটের নাম্বারে, দুবার রিং হতেই অপাশে কল রিসিভ হলো। হয়তো এই কলের অপেক্ষায় ছিলো। 


- আসসালামু আলাইকুম পাঞ্জাবিওয়ালা, ভালো আছেন? 


- ওয়ালাইকুম আসসালাম, আমি ভালোই আছি। আপনি কিভাবে বুঝলেন আমিই কল করেছি? 


- সেই তথ্য আপনার না জানলেও চলবে। এখন আমি কি আমার নুপুর ফেরত পাবো? 


- অবশ্যই পাবেন তবে আগামী সোমবারে। ততদিন না হয় আমার সাথে মোবাইলে কথা বললেন। 


- বাব্বাহ,পাঞ্জাবিওয়ালা তাহলে কথা বলতে জানে। আমি ভেবেছি আপনি সারাক্ষণ রেগে নাক লাল করতে জানেন। 


- আপনি কিভাবে জানেন আমি রেগে গেলে আমার নাক লাল হয়ে যায়? 


- আমি আপনাকে বিয়ে বাড়িতে খুব কাছে থেকেই দেখেছি, আর যতবারই আপনাকে দেখেছি ঠিক ততবারই আপনাকে রেগে থাকতেই দেখেছি। 


- আসলে, আমার এক কাজিনের উপর একটু রেগে ছিলাম তাই। 


- আচ্ছা, তাহলে রাখছি এখন আগামী সোমবার দেখা হচ্ছে। 


- এরই মাঝে আমাদের কি আর কথা হবে না? 


- আমি চাইলে অবশ্যই হবে, রাখছি আল্লাহ হাফেজ। 


কল কেটে গেল আবির আবারও কল করলো ওই নাম্বারটিতে কিন্তু মোবাইল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। 

আবির ভাবছে আবার কল করলে তখন মেয়েটির নাম জানতে চাইবে। সে রাতে আবির অপরিচিতার কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো। 


সকালে উঠতেই এমন এক কথা শুনলাম জাস্ট মাথা গরম হয়ে গেছে আমার। তাই মা'র সঙ্গে কিছুক্ষণ চিল্লা পাল্লা করে রুমে আসার সময় দেখতে পেলাম টিয়া কাঁদছে হয়তো মা'র সঙ্গে যা বলেছি তা সে শুনতে পেয়েছ। 

এতে আমার কি ওকে তো আমি পছন্দ করি না সেখানে বিয়ে করার প্রশ্নই আসে না। বিয়ে করলে আমি অপরিচিতার মতো কাউকে করবো টিয়াকে নয়। 


সেদিনের পর থেকে প্রায় রাতে অপরিচিতার সাথে কথা বলতাম। ওর নাম জানতে চাইলে ও বলে আমি অপরিচিতা আমার অন্য কোনো পরিচয় নেই। 


কাঙ্ক্ষিত দিন সোমবার চলে এলো। আজ অপরিচিতার সাথে দেখা করার দিন।তাকে তার নুপুর ফিরিয়ে দিয়ে তাকে আমার মনের কথা বলবো। আমি যে এই কয়দিনে অপরিচিতাকে ভালোবেসে ফেলেছি। 


তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম 


- অপরিচিতা,তুমি তো আমাকে একদেখায় চিনতে পারবে কিন্তু, আমি কিভাবে তোমাকে চিনবো ? 


- আমি তোমার খুব প্রিয় রঙের শাড়ি পড়ে আসবো। তুমি তখন নাহয় তোমার পছন্দের রঙ দেখেই আমাকে চিনে নিও। 


যেখানে দেখা করবো বলে আমরা ঠিক করেছিলাম। সেখানে আমি প্রায় তিনঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি কিন্তু অপরিচিতা আসছে না। ওর নাম্বারে কল দিলে বন্ধ বলছে। 

তাহলে কি কেউ আমার সঙ্গে প্র্যাঙ্ক করেছে? 

তবুও কেন যেন মানতে কষ্ট হচ্ছিল যে অপরিচিতা আমাকে এভাবে ধোকা দিতে পারে না। 


হঠাৎ, কেউ আমার সামনে এসে দাড়ালো তাকিয়ে দেখি টিয়া দাড়িয়ে আছে। ওকে এখানে দেখে আমি অবাক হয়ে আছি। তাই আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, 


- তুই এখানে কি করছিস?  তোর না আজ চলে যাবার কথা? 


- হ্যা,এয়ারপোর্টে তো যাচ্ছিলাম কিন্তু এখান দিয়ে যাওয়ার সময় তোমায় দেখলাম তাই তো এখানে এলাম।তোমার কোনো কাজ না থাকলে চলো আমাকে এয়ারপোর্টে পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসবে। 


টিয়ার কথা শুনে রাজি হলাম, ও বাংলাদেশে আসার পর থেকে একদিনও ওর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করিনি তাই আজ ওকে যেতে দেখে নিজের কাছে খারাপ লাগছে নিজের করা ব্যবহারের জন্য। 


একটু পর হয়তো এনাউন্সমেন্ট হবে আর চলে যাবে টিয়া। হয়তো ও আবার কখন আসবে ঠিক নেই। কারণ, মামা ওর জন্য ছেলে পছন্দ করে রেখেছে ও ওখানে যাওয়ার একসপ্তাহ পর আংটিবদল হবে। 


এনাউন্সমেন্ট হচ্ছে তাই টিয়া উঠে দাড়ালো এবং আমিও উঠে তাকে বিদায় জানালাম। ও যাবার সময় আমাকে একটি গিফট বক্স দিয়ে গেছে। 


বাড়িতে যাওয়ার পরও অপরিচিতার নাম্বারে কল করলাম কিন্তু নাম্বার বন্ধ বলছে। রাগে মোবাইল ফ্লোরে ছুড়ে ফেললাম। 

খাটে বসতেই টিয়ার দেয়া গিফট বক্স নজরে এলো।খুলে দেখিতো ও কি দিয়েছে আমাকে? 


খুলতেই বক্সের মধ্যে একটি সুন্দর হাত ঘড়ি ও আরেকটি চিরকুট দেখতে পেলাম। ঘড়িটা আমার অনেকে পছন্দ হয়েছে। এবার চিরকুট খুলতেই আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। 

এতো দেখি অপরিচিতার হাতের লেখা। পড়তে শুরু করলাম, 


প্রিয় আবির ভাই, 

শুরুতে তোমার কাছে  ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, আসলে তোমাকে কিভাবে কথাগুলো বলব বুঝতে পারছিলাম না। তাই আবারও এই চিরকুটের সাহায্য নিলাম। 

বাংলাদেশে আসার পর তোমাকে দেখেই আমার অন্যরকম ভালো লাগে। যখন শুনলাম তুমি খুলনায় যাবে তখন লোভ সামলাতে পারিনি এই ভেবে যে তোমার সঙ্গে কিছু টা সময় হয়তো কাটাতে পারবো। হয়তো তোমায় ভালোভাবে জানতেও পারব। তাই চলে যাই তোমার সাথে খুলনা। কিন্তু, সেখানে যাওয়ার পর বুঝতে পারি আমি সেখানে যাওয়াতে তুমি খুবই বিরক্ত হচ্ছিলে। তাই বিয়ের দিন কয়েকটা মেয়েকে বুদ্ধি শিখেয়ে দেই যেন আমাদের গাড়িতে  উঠার সময় একটু ভিড় জমিয়ে ফেলে।তারাও ঠিক ভাবে কাজটি করলো আর আমি সেই ফাকে তোমার পাঞ্জাবির পকেটে চিরকুটসহ আমার নাম্বার  আর আমার নুপুরটি রেখে দেই। 


তুমি সে রাতে কল দিয়ে যখন কল করে আমার সাথে শান্ত ভাবে কথা বললে, মনে মনে ভাবছিলাম কি হয় যদি আমার সাথে এরকম সুন্দর ভাবে সবসময় কথা বললে। আর অপরিচিতার নুপুরও তুমি ফেরত দেবে খুশি ভাবে তাও কোনো জবাব হীন ছাড়া । 


কিন্তু, আফসোস কোনো এক কারণে সেদিনের পর থেকে তোমার আমার প্রতি ব্যবহার আরও খারাপ হয়ে গেলো। হয়তো বাবা আর ফুপির সিদ্ধান্তে তুমি খুশি হওনি। কারণ তোমার মনে তখন অপরিচিতার বাস তারই কল্পনা। 


সেদিনের পর থেকে মনে হতো আমি তোমার সাথে ছলনা করছি। তোমাকে সব সত্যি বলে দেব। কিন্তু, বলার সাহস পাচ্ছিলাম না। 

তাই আজ অর্থাৎ সোমবার তোমার সাথে অপরিচিতার ওরফে আমার সঙ্গে দেখা করার কথা। জানো তোমার পছন্দের রঙ ধূসর রঙা শাড়ি পরেছি আমি। তোমার সঙ্গে দেখা করে সব সত্যি বলব তাই। কিন্তু, পর ভাবলাম তুমি তো আমাকে এমনিতেই দেখতে পারোনা এইসব জানার পর হয়তো আমাকে ঘৃনা করবে তাই আর তোমার সামনে আসিনি। পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও আবির।

আমার নুপুরটি নাহয় ডাস্টবিনে ফেলে দিও।

ভালো থেকো এই দোয়া আল্লাহর কাছে কামনা করি। 


ইতি 

টিয়া 


এতটুকু পরেই আবির তার চোখজোড়া মুছলো। আর বললো। টিয়া তুই এই কাজটি ভালো করলি না। তোরটা নাহয় তুই বলেছিস আর আমি শুনেছি এবার নাহয় আমারটা শুনবি। 


দীর্ঘ ছ'মাসের চেষ্টার পর আজ আমেরিকায় এসেছে আবির। এয়ারপোর্ট থেকে ক্যাব নিয়ে রওনা হলো তার মামার বাসার উদ্দেশ্য। 

প্রায় একঘন্টা জার্নির পর পৌছালো আবির। গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির দরজায় কলিংবেল বাজালো একটুপর দরজা খুললো টিয়ার বোন নাফিজা। আবিরকে দেখে নাফিজা অনেক খুশি হলো। আবির তাকে জিজ্ঞেস করলো টিয়া কোথায় আছে? তখন নাফিজা জানালো টিয়াকে আজ ছেলেপক্ষ দেখতে এসেছে। তারা সবাই এখন বাসার ছাদে আছে। 


তাই আবির নাফিজাকে সাথে নিয়ে চললো ছাদের দিকে।ছাদে প্রবেশ করতেই সর্বপ্রথম দেখলো টিয়াকে আর তার সাথে দাড়িয়ে আছে এক ছেলে।হয়তো এই ছেলে টিয়াকে দেখতে এসেছে। সে এগিয়ে গেলো যেখানে হালকা পাতলা মিউজিক বাজানো হচ্ছে। সেখান থেকে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে আবির বলতে শুরু করলো, 


-হ্যালো এভরি ওয়ান, আশা করি সবাই ভালো আছেন। হয়তো আমাকে আপনাদের চিনতে অসুবিধা হচ্ছে। তাই আপনাদের এই অসুবিধা আমি কাটিয়ে দিচ্ছি। আমি জনাব আমজাদ সাহেবের একমাত্র বোনের ছেলে,আবির । যে কি না সূদুর বাংলাদেশ থেকে ছুটে এসেছি একজনকে ধরতে। যে কি না আমার সাথে ছলনা করে এদেশে গা ঢাকা দিয়ে চলে এসেছে। 


- আবির কে এই মেয়ে? যে আমার সোনার টুকরো ভাগিনার সাথে ছলনা করে। নাম বল সেই মেয়ের দেখবি সেই মেয়ের পরিবার সহ এখন এই মূহুর্তে হাজির করবো।

কথাগুলো বললেন টিয়ার বাবা অর্থ্যাৎ আবিরের মামা। 


- মামা, আগে তুমি পুরো কথা শুনো। 


সেই মেয়ে আমাকে বেশ মনে মনে পছন্দ করছে। কিন্তু, আমাকে সে একবারও বলেনি। আর  আমি একটু একা থাকতে পছন্দ করি সেজন্য তার সঙ্গ আমার কাছে বিরক্ত লাগতো।সে আমার বন্ধুর বিয়েতে প্রায় এক প্রকার জোর করে আমার সাথে যায় যখন দেখলো সে আমার কাছে পাত্তা পাচ্ছে না। তখন সে আমাকে তার পরিচয় লুকিয়ে চিরকুটসহ তার নাম্বার এবং তার একপায়ের নুপুর আমার পাঞ্জাবির পকেটে লুকিয়ে দিয়ে দেয়। বাড়িতে আসার পর আমি সেই চিরকুট এবং তার নুপুর পাই। সেই চিরকুট লেখা ছিলো,সে আমাকে বিয়ে বাড়িতে দেখেছে, সে আমাকে পছন্দ করে। কিন্তু, সামনে বলার সাহস নেই তাই তার নুপুর আমাকে দিয়েছে যেন তার সাথে দেখা হলে তাকে পছন্দ হলে নুপুরটি পড়িয়ে দেই। 

আর তার নাম সে চিরকুটে লিখেছিল অপরিচিতা। 


তো ঠিক একসপ্তাহ পর তারসাথে আমার দেখা করার কথা কিন্তু সে অপরিচিতা হয়ে আমার সামনে আসে নি সে এসে ছিল যে পরিচয়ে সে আমার আগে থেকেই পরিচিত। সে আমাকে অনুরোধ করলো তাকে যেন আমি এয়ারপোর্টে দিয়ে আসি। সেখানে গেলাম আসার সময় সে আমাকে একটি গিফট বক্স দিলো। 


বাড়িতে এসে গিফট বক্স খুলে দেখি আমার অপরিচিতার হাতের লেখা আরেকটি চিরকুট সাথে একটি হাতঘড়ি। 

চিরকুট সে তার করা কাজ গুলো উল্লেখ্য করছে। কিন্তু, চিরকুটের শেষের অংশে সে একটি লাইন কাটাছেঁড়া করেছে এবং সে শুধু তার পক্ষের কথাগুলো বলেছে আমার কথা তো সে একবারও শুনতে চাইনি আমি কি চাই তার কাছে? এখন আপনারাই বলুন এখন সেই মেয়েটির কি করা উচিত? 


সবাই বলছে মেয়েটির পরিচয় তারা জানতে চায়। তারা মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করবে কেন সে এমন কাজ করেছে। 


আবির এবার টিয়াকে উদ্দেশ্য করে ডাকলো, 


- টিয়া ওরফে অপরিচিতা,এখানে এসো। 


ব্যস,উপস্থিত সকলে যেন আকাশ থেকে পড়লো। কারণ টিয়া এই কাজ করেছে তাদের কাছে এই বিষয়টি অকল্পনীয়। 


আর টিয়া সে তো লজ্জায় কারো দিকে তাকাতেই পারছে না। 


- টিয়া তাড়াতাড়ি এখানে এসো তোমার কাছ থেকে আমার কিছু জানার বাকি আছে?  জলদি উঠে এসো? 


টুয়া এবার উঠে গেলো আবিরের কাছে। টিয়া ভয়ে

কলিজা শুকিয়ে একটুখানি হয়ে গেছে। 


- তো তোমার সেই কাটা ছেড়া অংশে কি লিখা ছিলো বলো এবার কোনো মিথ্যা বলবে না। যা বলবে সত্যি বলবে। 


- আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি, এই 

কথাটি লিখা ছিলো টিয়া চোখ বন্ধ করেই বলল। 


নুপুর এবার কারো স্পর্শ পেলো তার পায়ে। চোখ খুলতেই দেখতে পেলো আবির তার পায়ে  নুপুরটি পড়িয়ে দিচ্ছে। 


টিয়ার পায়ে নুপুর পরানো শেষ হলে আবির উঠে দাড়ায় এবং তার মামার উদ্দেশ্য বলে, 


- মামা, তোমার মেয়ে আমার থেকে উত্তর না নিয়ে এবং তার এই নুপুর রেখে চলে এসেছে তাই আজ তার উত্তর ও নুপুর  তাকে ফেরত দিলাম। আর তুমি খুব জলদি তোমার মেয়েকে চিরজীবনের জন্য বাংলাদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা করো বুঝলে। 


বলেই টিয়াকে চোখটিপ দিলো আবির। আর টিয়া সে তো বিশ্বাস করতে পারছে না। 


যে মানুষ কখনোই তার হবার ছিল না সে কিভাবে আজ তার দুয়ারে এসেছে বসতি গড়তে?

Previous
Next Post »