Romantic Story Husband Wife Romance Tale

Romantic Story Husband Wife Romance Tale
Husband Wife

--ওই ছেলে!
--কী?
--আমার সোয়ামী লাগবে।
.
বউয়ের দিকে ভ্রু কুঁচকিয়ে আঁড়চোখে তাকালাম। গত একমাস ধরে'সোয়ামী লাগবে সোয়ামী লাগবে' বলে আমার কান একেবারে
ঝালাপালা করে দিয়েছে।
.
--বউ,বউ গো!
--কী?
--দয়া করে আমায় বলবে সোয়ামী জিনিসটা আসলে কী?
--সোয়ামী মানে সোয়ামী।
--সোয়ামী জিনিসটা কী? খায় নাকি পড়ে??
--আমি অতকিছু জানি না। আমার সোয়ামী লাগবে বেস।
.
কথাটা বলেই বউ আমার বাচ্চাদের মতো ভ্যা ভ্যা করে কান্না শুরু করে দিলো। আমি পড়ে গেলাম মহাবিপদে। এই সোয়ামী জিনিসটা আসলে কী আমি ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারছি না। আঞ্চলিক ভাষায় সোয়ামী মানে হচ্ছে স্বামী কিন্তু ব্যাপারটা তো ঠিক সেরকমটাও নয়।
.
--বউ!!
--হু।
--সোয়ামী মানে তো স্বামী। তুমি কী আর একটা স্বামী চাও??
--ছিঃ ছিঃ তুমি এসব কী বলছ!! তুমিই তো আমার স্বামী। আমার সবকিছু। আমার নতুন একটা পৃথিবী।
.
বউয়ের কথা শুনে আবেগে আপ্লুত হয়ে গেলাম। কিন্তু এদিকে তো বউয়ের 'সোয়ামী লাগবে সোয়ামী লাগবে' এই ঠ্যালায় বাঁচতেছি
না।
.
বেশ ক'দিন ধরে রাতে ঘুম নাই,দিনেও ঘুম নাই। ঘুম একেবারে হারাম হয়ে গেছে। সোয়ামী জিনিসটা আসলে কী? খায় নাকি পড়ে?
নাকি মাথায় দেয়? কোনটা?
সারাদিন অফিস করি আর রাতেরবেলা বাসায় এসে এই সোয়ামী জিনিসটা নিয়ে গবেষণা করি। আসলে কী এইটা? যেভাবেই হোক
আমাকে বের করতেই হবে। পুরো গুগল ঘেটে শেষ করে ফেলেছি। ঘুরেফিরে ওই একটা কথাই গুগলে আসে। সোয়ামী মানে স্বামী।
.
এদিকে এই সোয়ামী নিয়ে গবেষণা করতে করতে অফিসেরকাজকর্মেও ঠিকমতো মনোযোগ দিতে পারছি না। ফলস্বরূপ জি.এম
স্যারের কাছ থেকে কঠিন ঠ্যালা খেতে হচ্ছে রোজরোজ।
.
--চাকরি ভালো লাগে ফারাবী সাহেব??
--জ্বী স্যার লাগে তো।
--আপনার জন্য একটা সুখবর আছে।
--কী সুখবর স্যার??
মনে মনে ভাবতে লাগলাম,এই বুঝি প্রমোশনটা হয়েই গেলো আমার।
.
--আপনার জন্য একটা টিকেট কাটব ভাবছি।
--কীসের টিকেট স্যার??
--চাঁদে ভ্রমণের টিকেট।
.
স্যারের কথা শুনে আমি উনার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলাম। শালা এক নাম্বারের খচ্চর, কিপটা। উনার মতো এরকম খচ্চর আমি
জীবনে দু-একটা দেখিনি আর।
.
--না স্যার লাগবে না। আমি ঠিকমতো সব করছি আজ থেকে।
--মনে থাকবে তো নাকি ভুলে যাবেন আবার??
--অবশ্যই মনে থাকবে স্যার।
--মনে না থাকলে কিন্তু ফোন করে চাঁদে ভ্রমণ কনফার্ম করে দিব
আপনার।
.
একটা মুচকি হাসি দিয়ে মনে মনে কয়েকটা গালি দিতে দিতে জি.এম স্যারের রুম থেকে বেড়িয়ে গেলাম।
.
বাসায় ফিরতেই আবার বউয়ের প্যানপ্যানানি শুরু হয়েছে। জীবনটা তেজপাতা বানিয়ে দিলো আমার। অফিসে গিয়েও শান্তি নেই, ঘরে ফিরেও শান্তি নেই।
.
--ওই ছেলে আমার সোয়ামী কই হু??
--এই যে আমিই তো তোমার সোয়ামী।
--আরে তুমি না তো।
--তাহলে কে??
বউ ভ্রু কুঁচকিয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি বিরক্তির দৃষ্টি
নিয়ে টিভির দিকে তাকিয়ে গোপাল ভাড় দেখতে শুরু করলাম।
.
--কার্টুন দেখলে চলবে??
--তো কী দেখব??
--আমার সোয়ামী এনে দাও।
বউকে ধমক দিব সেই সুযোগটাও নেই। একবার রেগে গিয়ে খুব
জোরে ধমক দিয়েছিলাম। দু'দিন পর্যন্ত ঠিকমতো কিছুই খায়নি।
তারপর থেকে কানে ধরেছি যতকিছুই হোক জীবনেও আর কোনোদিন
বউকে ধমক দিব না।
.
--আচ্ছা সোয়ামী জিনিসটা তুমি কোথায় দেখেছ??
--টিভিতে।
--আমাকে দেখাও তো।
--টেন স্পোর্টসে দাও।
আমি গোপাল ভাড় থেকে চ্যানেলটা ঘুরিয়ে টেন স্পোর্টসে
দিলাম।
.
--এখানেই সোয়ামী দেখাবে দেখো তুমি।
.
অধীর আগ্রহে টিভির দিকে তাকিয়ে রইলাম। আজকে আমাকে
যেভাবেই হোক সোয়ামী জিনিসটা দেখতেই হবে।
হঠাৎ ফোনে একটা ম্যাসেজ আসতেই পকেট থেকে মোবাইলটা বের
করে ম্যাসেজ চেক করতে লাগলাম। হঠাৎ করেই বউ আমার জোরে
চেঁচিয়ে উঠল।
.
--এই যে আমার সোয়ামী। ওই তুমি দেখো। আমার এই সোয়ামীই
লাগবে।
.
দ্রুত মোবাইলটা সোফায় ফেলে দিয়ে টিভির দিকে তাকালাম।
এতদিনের গবেষণার ফলাফল আজকে বের হতে যাচ্ছে।
টিভির স্ক্রিনে তাকাতেই আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম। একবার
টিভির স্ক্রিনে তাকাচ্ছি আর একবার বউয়ের দিকে তাকাচ্ছি।
.
--এবার দেখেছ আমার সোয়ামী?? আমার এটাই চাই। এক্ষুনি চাই।
আজকেই চাই। কালকেই চাই।
.
আমি এখনও বউয়ের দিকেই তাকিয়ে আছি। কিছু বলব যে তাও
বলতে পারছি না।
.
--আরে তুমি চুপ করে আছো কেন?? কিছু বলো। কবে এনে দিবে
বলো। জলদি বলো।
--এইটার নাম কী এটা??
--আরে কিচ্ছু মনে ছিল না। সেদিন টিভিতে প্রথম দেখেছিলাম।
নামটা মনে ছিল না ঠিক। তাই যা মনে হয়েছে তাই বলেছি।
.
আমি বউয়ের দিকে ভ্রু কুঁচকিয়ে তাকিয়ে আছি। শরীরের সব
রাগগুলো ধীরে ধীরে মাথায় উঠছে। মাথাটা ১১৫০ ভোল্টেজের
মতো গরম হয়ে আছে। তারপরও ঠান্ডা মাথায় বউয়ের দিকে
তাকিয়ে বললাম,
.
--আচ্ছা তোমার সোয়ামী আমি কালই এনে দিব।
আমার কথা শুনে বউ আমার আহ্লাদে আটখানা হয়ে আমার গালে
একটা চুমু বসিয়ে দিলো। তারপর আমাকে রাতের খাবার দিতে
রান্নাঘরে চলে গেলো।
.
টিভিতে শাওমি নোট সেভেনের এড হচ্ছিলো। বউ আমার সেটা
দেখেই কেনার জন্য উতলা হয়ে উঠেছে। শাওমিকেই সে সোয়ামী
বলছে। আরে ভাই প্রথমে বললেই তো হতো যে এটা একটা মোবাইল।
শাওমি মোবাইল। তাহলেই তো আমার এত গবেষণা আর এত পরিশ্রম
করতে হয় না। সিম্পলি একটা শাওমিকে সে সোয়ামী বলছে!!
একটু বিষ হবে ভাই?? ভাতের সাথে তরকারি মনে করে খেয়ে
ঘুমিয়ে যেতাম?
Previous
Next Post »