রাতের দুই প্রহর কাটবে কাটবে ভাব। পুরো গ্রাম গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। মাঝে মাঝে দূর থেকে ভেসে আসছে শিঁয়ালের ডাক। আবার কখনো কখনো গ্রামের উত্তরের দিকটায় যে প্রকাণ্ড বটগাছটা আছে সেখান থেকে কোনো এক নাম না জানা নিশাচর পাখি বিশাল ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে এক ডাল থেকে অন্য ডালে উড়ে যাচ্ছে। আবার কখনো দূরে কোথাও রাতের সকল নিস্তব্ধতা ভেঙে ডেকে উঠছে পেঁচা। এ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই বললেই চলে। পরিবেশ যখন এমন ঠিক তখনই রাতের আঁধার ভেদ করে এক নারী কণ্ঠে ফিসফিস করে ভেসে উঠলো করুণ মিনতি। বললো,
.
" তুমি এখন যাও অনিরুদ্ধ, পাছে কেউ দেখলে কলঙ্ক রটবে।"
.
গ্রামের দক্ষিন দিকে মোল্লা বাড়ি। সেই বাড়িরই একটা ঘরে এখনো টিমটিম করে জ্বলছে কেরোসিনের বাতি। সেই আলো ঘর ছাড়িয়ে খোলা জানালা দিয়েও বেরিয়ে আসছে ফিনকি দিয়ে। কথাটা সেই ঘর থেকেই আসলো। কেউ যদি ঠিক এই সময়েই নদীর দিকটায় গিয়ে মোল্লা বাড়ির দিকে তাকাতো তাহলে দেখতে পেত পূর্বের জানালার ঠিক পাশেই দাড়িয়ে আছে একটা ছায়ামূর্তি। নারী কণ্ঠে এমন মিনতি শুনে ছায়ামূর্তিটা খানিক নড়ে উঠলো। তারপর আস্তে আস্তে হাত বুলালো পায়ের দিকটায়। পূর্বের জানালার ঠিক পাশেই ঝোপঝাড়, আর সেখানেই চলে মশাদের রাজত্ব। হঠাৎ করে কোনো এক মানব সন্তান তাদের রাজ্যে চলে আসার কারণেই বোধহয় তাদের এই যুদ্ধ যাত্রা। জানালার ওপাশ থেকে আবারও সেই একই করুণ মিনতিভরা কণ্ঠে ফিসফিসিয়ে ভেসে আসলো,
- অনিরুদ্ধ, তুমি এখন যাও। দেখলে লোকে কলঙ্গ রটবে।
.
ছায়ামূর্তিটা আর কোনো কথা বলে না নিঃশব্দেই সরে যায় জানালার পাশ থেকে। এরপর ধানের আইল পথে হাঁটা শুরু করে নদীর দিকে। জানালার ওপাশের নারীমূর্তিটা কিছুক্ষণ ঠাঁই দাড়িয়ে রইলো গ্রিল ধরে। ঘরের ভেতর থাকা নারীমূর্তি হয়তো বাইরের ছায়ামূর্তিটার চলে যাওয়া টের পায়নি। তাই তো আরও দুইবার মৃদু স্বরে ফিসফিস করে ডাকলো,
- অনিরুদ্ধ.... অনিরুদ্ধ....।
দুইবার ডাকার পরও যখন কোনো সাড়া শব্দ মিললো না তখন একটা দীর্ঘশ্বাস্ ছেড়ে আস্তে করে জানালার পাল্লা দুটো ভেজিয়ে দিলো। তারপর আরও কয়েকবার ফুপিয়ে উঠে গিয়ে বসলো বিছানায়। কেরোসিনের নিভু নিভু লাল শিখায় চোখের নিচটা চকচক করে উঠে মেয়েটির। তারপর এক সময় তা গাল বেয়ে পড়ে মাটিতে। অবহেলা ভরে শাড়ির আঁচল দিয়ে অযত্নেই গাল বেয়ে পড়া পানিটুকু মুছে নেয় মেয়েটি। কিন্তু পরোক্ষণেই আবারও চোখটা ভরে উঠে পানিতে পরিশেষে বেশিক্ষণ থাকতে না পেরে আবারও গাল বেয়ে পড়ে মাটিতে। এবার কিন্তু আর অশ্রুজল টুকু মুছলো না মেয়েটি। কান্নার রেশটা বাড়ছে। তাই বার বার অশ্রু না মুছে একবারে মোছাই বুদ্ধিমানের কাজ ভেবেই হয়তো এমন অবহেলা।
.
অন্যদিকে ধানের আইল ধরে হেটে যাচ্ছে একটা ছায়ামূর্তি। কোনো তাড়া নেই। যেতে যেতে একবারের জন্য থমকে দাড়ালো ছায়ামূর্তিটা। তারপর আশপাশটা একবার দেখে নিলো ভালো করে। নাহ্ কাউকেই দেখা গেলো না। সে লক্ষ্যই করলো না তার ঠিক কিছুটা দূরেই আরও একটা ছায়ামূর্তি ধানের আইল ধরে নিঃশব্দে পা ফেলে হেটে চলছে তারই পিছন পিছন।
.
অনিরুদ্ধ যখন নদীর পাড়টায় এসে বসলো পিছনের ছায়ামূর্তিটাও ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো সেদিকে। ঠিক তখনই ঝুন ঝুন শব্দে চমকে পিছন ফিরে তাকালো সে। চাঁদ ততক্ষণে মাথার উপরে এসে থেমেছে। সেই আবছা আলোতেই সে দেখলো মধুমিতা দাঁড়িয়ে আছে ঠিক তার পিছনেই। মধুমিতাকে দেখে একটু চঞ্চল হয়ে উঠলো অনিরুদ্ধ। আশপাশ আরও একবার নজর দিলো ব্যস্ত ভাবে। ওর এমন কাণ্ডে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে মধুমিতা। ওর পাশে বসতে বসতে বললো,
- ভয় নেই, গ্রামের সবাই তো আর তোমার মত নয় যে জেগে জেগে মোল্লা বাড়ির জানালায় গিয়ে দাড়িয়ে থাকবে।
- তুই এখানে কেনো?
- আমি এমনিতেই আসলাম দেখতে যে তুমি পাহারায় ফাঁকি দিচ্ছো নাকি। তুমি বোঝো না একটা যুবতী মেয়ে নিজের ঘর ছেড়ে কেনো আসে?
.
প্রথম কথাটা স্বাভাবিক ভাবে বললেও দ্বিতীয় কথাটা বলতে বলতে চোয়াল খানিকটা শক্ত হয়ে উঠে মধুমিতার। অনিরুদ্ধ বোঝে কিন্তু কিছু বলে না। ভয় একটাই ভোর হতে চললো হঠাৎ করে কেউ যদি ওদের এখানে এইভাবে দেখে তাহলে সেটা মোটেও ভালো কিছু হবে না। তাই বার বার চারিদিকটা দেখে নিচ্ছে অনিরুদ্ধ। এক পর্যায়ে বললো,
- তুই এখন যা মধু। ভোর হতে চললো কেউ এসে পড়তে পারে।
- আসলে আসুক। তাতে তোমার কী? আমি তো ভয় পাই না।
- লোকে তোকেই কলঙ্ক দিবে।
- কেনো? আমি মেয়ে বলেই কী সব অপবাদ আমার? কলঙ্ক কেবল মেয়েদেরই হয় অনিরুদ্ধ দা? ছেলেদের হয় না?
কথাগুলো বলতে বলতে মধুমিতার গলাটা খানিক কেঁপে কেঁপে উঠলো। অনিরুদ্ধ শান্ত গলায় বললো,
- কখনো তো শুনিনি যে ছেলেদের কলঙ্ক হয়।
- বিচ্ছিরি ব্যবস্থা। কেনো ছেলেদের কলঙ্ক হবে না কেনো? কেবল মেয়েরাই কী সব দোষে দোষী বলো? তোমরা ছেলেরা বুঝি তুলসী পাতা?
- তা তো জানি না ।
- তুমি তো কিছুই জানো না বোঝোও না বুঝলেও বলো না। তুমি খুব খারাপ অনিরুদ্ধ দা, খুব খারাপ।
.
কাঁপা কাঁপা গলায় কথাগুলো বলতে বলতে উঠে দাড়ায় মধুমিতা। তারপর সোজা আইল পথের দিকে এগিয়ে যায়। অনিরুদ্ধ তখনও ঠাঁই বসে থাকে সেখানেই । মধুমিতা একটু দূরে যেতে বুক ফেটে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস্। অনিরুদ্ধ ভাবে ভালোবাসা এত জটিল কেনো। অবশ্য সহজ হলে ভালোবাসার তেমন একটা মূল্যই থাকতো না, তাই হয়তো ভালোবাসা এত জটিল। রহস্যময় আর সেই সাথেই রসোল্লাস।
.
ধীরে ধীরে দিনের আলো ফুটতে শুরু করে,সেই সাথে অনিরুদ্ধও উঠে দাড়ায়। মাথাটা বেশ ঝিমঝিম করছে। রাতের অনিন্দ্রার প্রভাবই হবে হয়তো। মা নিশ্চয় সারারাত জেগে ছিলো। এমন কোনো দিন নেই যে মা অনিরুদ্ধকে না খাইয়ে ঘুমিয়েছে। মায়েরা এমন কেনো? বুঝে আসে না ওর। মনে মনে একটা অপরাধ বোধ জেগে উঠে ওর ভেতর । রাতটা এখানে কাটানো মোটেও ঠিক হয়নি। অন্তত খেয়ে আসা উচিত ছিলো। এর পর থেকে কখনোই না খেয়ে বের হবে না অনিরুদ্ধ। হাটতে হাটতে এক দৃঢ়মূল প্রতিজ্ঞা করে সে।
.
পরের দিন রাতেও একই দৃশ্য। তবে আজ আর নারী কণ্ঠে জানালার বাইরে দাড়িয়ে থাকা অনিরুদ্ধকে চলে যেতে বলার কোনো মিনতি নেই। বরং ফিসফিস করে বললো,
- এঁটো পাতে খেতে চাও? লোকে কী বলবে? তাছাড়াও আমাদের জাত ভিন্ন। লোকে তোমায় ছিঃ ছিঃ করবে অনিরুদ্ধ।
.
অনিরুদ্ধ কিন্তু এইসব কথার কোনোই জবাব দিলো না। জালানার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে রইলো ঠাঁই। ভেতরে থাকা মেয়েটাও একটা হাত আস্তে আস্তে উঠে আসলো অনিরুদ্ধের হাতের উপর। মেয়েটা বুঝতেও পারলো না একটু খানির জন্যে হলেও অনিরুদ্ধের বুকটা কেঁপে উঠলো। শরীরের শিরায় শিরায় বয়ে গেলো একটা ঠাণ্ডা স্রোত। মনে পড়ে গেলো দুই বছর আগের কথা। সেইদিনও ঠিক এমন করেই অনিরুদ্ধের হাতের উপর শেষ বারের জন্য হাতটা রেখেছিলো সাবিহা। বলেছিলো,
- আগামী সোমবার বিয়ে, তুমি কিছু বলবে না?
সেইদিন সাহিবার কণ্ঠে ছিলো আকুতি, ছিলো ওকে চিরদিনের জন্য হারানোর ভয়। অনিরুদ্ধও সাবিহার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরেছিলো সেদিন । বলেছিলো,
- বোরবার ঘাটে নৌকা নিয়ে আসবো। চলে এসো।
.
নৌকা ঠিকই এনেছিলো অনিরুদ্ধ কিন্তু যাওয়া হয়নি সাবিহার। মাঝরাতে সে যখন সবে মাত্র ঘর থেকে বেরিয়েছিলো ঠিক তখনই সামনে এসে দাড়িয়েছিলো আমেনা বেগম। চোখে ছিলো জল। মেয়ের হাত ধরে মিনতি করেই বলেছিলো,
- বংশের মুখে এমন চুলকানি মাখিসনে মা।
মেয়ের হাত ধরে কথাটা বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলো আমেনা বেগম। সাবিহার আর যাওয়া হয়নি। অনিরুদ্ধ সারারাত নদীর পাড়ে বসে বসে তাকিয়ে ছিলো সাবিহার আসার পথে। আসেনি।
.
বিয়েটাও বেশ জমকালো ভাবেই হয়েছিলো। সবাই খুশি ছিলো সেদিন কিন্তু কেউই লক্ষ্য রাখলো না যে কণের চোখে বিচ্ছেদের ছায়া। আমেনা বেগম মেয়ের মুখের দিকে তাকাতে পারছিলো না। দমটা যেনো তার বন্ধই হয়ে আসছিলো। ঠিক যেমনটা এসেছিলো সেদিন যেদিন মেয়েটা একবারে বাপের বাড়ি চলে এসেছিলো। বাপ মরা মেয়েটাকে আমেনা বেগম বড় ঘরে বিয়ে দিতে চেয়েছিলো, দিয়েছিলোও তাই। কিন্তু বড় ঘর হলেই ভালো বর হয় না। এক বছরের বেশি টিকলো না সংসার। এটাকে ঠিক তালাক বলে না, বরং তাড়িয়ে দেওয়াই বলে। মেয়েটা যেদিন এসেছিলো সেদিনই শরীর আঁচল তুলে আমেনা বেগম দেখেছিলো দাঁগগুলো। বুকে পিঠে পেটে এমন কালো কালো ছোপ ছোপ দাঁগ দেখে বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো উনার। সেদিনের পর থেকে মেয়েটার চোখের দিকে তাকাতে পারে না অামেনা বেগম। কেবল সময়ে সময়ে দীর্ঘশ্বাস্ ছাড়েন আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে। সে দৃশ্যে ভারী হাসি পায় সাবিহার।
.
"তুই চাইলে আর আটকাবো না।"
.
মেয়ে বাড়ি আসার পর মুখের কালো মুখটার দিকে তাকিয়ে কয়েকবার কথাটা বলেছিলো আমেনা বেগম। সাবিহা কেবল হেসেছে। বলেছে,
- তুমি বড় স্বার্থপর মা, তোমার মেয়ের ঘর ভেঙেছে, আর তুমি সেই ঘর আবার তোলার জন্য ওকেই বেঁছে নিলে? আমি তো ওকে এঁটো পাত বাড়তে পারবো না মা।
আমেনা বেগম আর কোনো কথা বলে না। মাথা নিচু করেই চলে যায়।
.
-অনিরুদ্ধ.... আজ কিছু বলবে না? নদীর পাড়টায় বসবে?
.
সাবিহার কথায় ঘোর কাটে অনিরুদ্ধের।বলে,
.
- লোকে দেখলে?
- কলঙ্ক রটবে? সে আর পারবে না অনিরুদ্ধ। তার সময় ফুরিয়ে এসেছে।
- বলছো?
- হুমমম বলছি, তুমি অপেক্ষা করো আমি আসবো। এবার আর ভুল হবে না অনিরুদ্ধ। দেখো, আমি ঠিক আসবো।
.
কথাটা বলতে বলতে সাবিহা একটা চাপ দেয় অনিরুদ্ধের হাতে। তারপর হাতটা ছাড়িয়ে নেয়। আস্তে করে জানালার পাল্লাটা ভাজিয়ে দেয় ওপাশ থেকে।
.
অনিরুদ্ধ হাটতে থাকে আইল পথ ধরে। তার ঠিক পিছনেই আরও একটি ছায়ামূর্তি হেঁটে চলছে সমান গতিতে। পায়ের শব্দে একবার পিছন ফিরে তাকালো সে। হুমম এবার আর ভুল হয়নি, ঐ যে আসছে মেয়েটা। হাটার গতি খানিক মন্থর করে অনিরুদ্ধ। ততক্ষণ দ্রুত পা চালিয়ে এগিয়ে এসে পাশে পাশে হাটছে মেয়েটি।। কারও মুখেই কোনো কথা নেই। কেবল চলছেই। যেনো তাদের তাড়া বলতে কিছু না থাকলেও যেতে হবে হাজার ক্রোশ পথ পাড়ি দিয়ে তাই কথা বলবার সময় নেই মোটেও।
.
নদীর পাড়টায় বসতে বসতে সাবিহাই বললো প্রথম কথাটা।
- আমি দেখেছি তুমি বার বার পিছন ফিরে তাকাচ্ছিলে। কেনো? ভেবেছিলে এবারও বুঝি আসবো না?
- কেউ দেখেনি তো?
সাবিহার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়েই পাল্টা প্রশ্ন করে অনিরুদ্ধ।
- সে ভয় আমার নেই অনিরুদ্ধ, সমাজের সব বিধান ঘুচে গেছে। তবে অনেক দিন পর মায়ের মুখে আমি হাসি দেখেছি আজ। হয়তো ভেবেছে আগের মতই ঘর ছাড়তে চাচ্ছি আর বুঝি ফিরবো না। সবটা যেনো গুছিয়েই নিয়েছি। এতে হয়তো বংশে চুনকালি পড়বে। কিন্তু আমি ভালো থাকবো ভেবেই বোধহয় উনার এই খুশি হওয়া। অথচ...... অথচ.... সময়ের কাজটা সময়ে করলেই পারতো তাই না? আসলে আমরা বড্ড আজব জানো তো, কখনোই সময়ের কাজটা সময়ে করতে জানি না। যখন করি তখন সেটা আর কাজে আসে না আর আসলেও মনে আসে না।
.
ধীরে ধীরে কথাগুলো বলতে বলতে অনিরুদ্ধের কাঁধে মাথাটা এলিয়ে দেয় সাবিহা। চোখের কোণ বয়ে বয়ে পানি পড়ে নিমিষেই ভিজে উঠে কাঁধটা। হাতটা শক্ত করে ধরে অনিরুদ্ধ। বলে,
- হাতটা ধরে থাকি?
সাবিহা কোনো কথা বলে না, কেবল মৃদু হাসে, সে হাসি চাঁদের আবছা আলোতে দেখতে পায় না যদিও কিন্তু সে জানে মেয়েটার মুখের কোণে এখন এক অদ্ভুত হাসির রেখে ফুটে উঠেছে। এর আগেও এমনই এক হাসি ফুটে উঠতো মেয়েটার মুখে। এর পরের ঘটনাটা তার কাছে অচেনা নয়। মেয়েটা এখনই নিজেকে জোর করে ছাড়িয়ে নিবে ওর কাছ থেকে, তারপর ব্যাকা ঠোঁটে বলবে, "খুব না, এমন করে পরের মেয়েকে ধরে রাখতে? এতই যদি ধরে রাখতে হয় তাহলে বিয়ে করে ঘরে নিয়ে গেলেই পারো।" ঠিক তেমনটাই ঘটলো আবার। সাবিহা চট করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো অনিরুদ্ধের কাছ থেকে। তারপর ঠোঁটের কোণে সেই হাসিটা এনে বললো,
- খুব না, পরের মেয়েকে এমন করে ধরে রাখতে? যদি ধরেই থাকতে হয় তাহলে........
.
পরের কথাটা বলতে গিয়েই থমকে দাড়ালো মেয়েটা। গলাটা একবার কেঁপে উঠলো। তারপর গলা নামিয়ে বললো,
- আমি এখন যাই অনিরুদ্ধ। তুমি বরং এক কাজ করো, কাল একবার আমাদের বাড়ির দিকটায় এসো।
.
কথাটা বলতে বলতে দ্রুত গতিতে হাটা শুরু করে মেয়েটা। অনিরুদ্ধ তাকিয়ে তাকে সেদিকে। কিন্তু বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। অন্ধকার ঝাপসা চোখে বেশিক্ষণ সয়লো না।
.
এক প্রকার দৌড়েই বাড়ির পিছনটাই এসে দাড়ালো সাবিহা। আসলেই কী মানুষের অভ্যাস বদলায় না? আর একটু হলেই পুরো কথাটা বলতে লেগেছিলো সে। আর বললে কোনো ভাবেই নিজের কথা ফেলতে পারতো না সে । একবারই কথা দিয়ে কথা রাখতে পারেনি। সেটাই শেষবার হোক। বেশ খানিকটা হাপিয়ে গেছে মেয়েটা। হাপাতে হাপাতে মুঠো ভরে কয়েকটা পাতা তুলে নেয়। তারপর মুখে পুরে দিয়ে চিবাতে থাকে জন্মের মত করে। যেনো জীবন আর মৃত্যুর সব বাঁধা ঘুচে গেলো।
.
অনিরুদ্ধ কথা রেখেছে সকাল বেলায় মোল্লা বাড়িতে গিয়ে দূর থেকে একবারের জন্য মেয়েটার কালো প্রাণহীন মুখখানা দেখে এসেছে। আসরের নামাজের পর নিয়ে যাওয়া হলো মেয়েটাকে। অনিরুদ্ধ উল্টো পথে এসে বসেছে নদীর পাড়টায়, একা। কানে বাজছে,
" আমি এখন যাই অনিরুদ্ধ। তুমি বরং এক কাজ করো, কাল একবার আমাদের বাড়ির দিকটায় এসো। দেখে যেও।"
.
"কলঙ্ক রটবে? সে আর পারবে না অনিরুদ্ধ। তার সময় ফুরিয়ে এসেছে।"
.
ঠিকই বলেছিলো মেয়েটা, এখন আর কেইবা রটবে কলঙ্ক। চলে যাওয়ার পর লোকে কলঙ্ক রটে না, প্রিয়জন হয়ে উঠে।
.
_______ সমাপ্ত।