Hi I'm WriterMosharef
বিয়েতে কনে বিদায়ের সময় কনের কান্না খুব দর্শনীয় একটা বিষয়।
সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে এই কান্না দেখে। এই সময়ে যেই মেয়ে যত বেশি কান্না করে সে তার বাবা মা কে তত বেশি ভালোবাসে আর তার পরিবারের বিচ্ছেদের কষ্ট বেশি বলে ধরে নেওয়া হয়।
কিন্তু আমার চোখ থেকে এক ফোটা পানি বের হচ্ছে না। বিশ্বাস করুন, আমি খুব করে চাচ্ছি আমার চোখ থেকে এক ফোটা পানি বের হোক তবুও কান্না আসছে না। সবাই উদগ্রীব হয়ে আছে কনের কান্না দেখার জন্য।
আম্মু, নানি আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে, কিন্তু আমার চোখ শুষ্ক। আমার খুব বিব্রত বোধ হচ্ছে।
সবাই হয়ত ভাবছে আমি আমার বাবা মা কে একটুও ভালোবাসি না। একজন তো ফিসফিস করে বলেই ফেলল মেয়ের মেকাপ নষ্ট হয়ে যাবে সেই ভয়ে কাঁদছে না।
কিরে আপা কাঁদছিস না কেন?
সোহান আমার কানের সামনে এসে ফিসফিস করে বলল।
আরে আমার তো কান্না পাচ্ছে না।
আমিও ওর কানে ফিসফিস করে বললাম।
আমি একটা জোরে চিমটি কাটবো?
তুই উষ্টা না খেতে চাইলে দূরে সর।
সোহান একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। কেমন ভাই হয়েছে আমার। আমার নাহয় কান্না পাচ্ছে না, তুই তো একটু কাঁদতে পারিস নাকি?
অন্তত কান্নার ভান টুকু তো করতে পারোস?
নাহ তা করবে কেন? এখন তো আর ওর সাথে ঝগড়া করার মানুষ টা চলে যাচ্ছে। ওর তো খুশি হওয়ার কথা।
আমার বিয়ে করা বর আস্তে আস্তে বলল ওগো একটু তো কান্না করো। জীবনে তো তোমাকে কাঁদতে দেখলাম না, আর বাকিটা জীবন তো আমাকে কাঁদিয়েই যাবে
একদিন অন্তত তোমার কান্না দেখার সুযোগ দাও।
আমি চোখ লাল করে রাসেদ এর দিকে তাকালাম। ও চুপ হয়ে গেল।
মা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল মা রে এই সময় একটু কাঁদতে হয়। সবাই কি ভাববে? তোর একটুও খারাপ লাগছে না। বাবা মায়ের প্রতি কোনো টান নেই। একটু
কাঁদার চেষ্টা কর।
মা, আমার তো কান্না পাচ্ছে না। চেষ্টা তো করছি।
বাবা মা আমাকে অনেক আদর দিয়ে মানুষ করেছে।
সোহানের চাইতেও আদরের ভাগ টা আমার জন্যই বেশি ছিলো। তবুও যদি এখন তাদের থেকে বিচ্ছেদের জন্য না কাঁদি বিষয় টা আসলেই খারাপ দেখায়।
আমাদের বাড়ির দুই বাড়ি পড়েই রাশেদের বাড়ি।
ছোট বেলা থেকেই শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। ওর মাকে আমি বড় আম্মু বলে ডাকি।
অর্থাৎ বিয়ে হলেও বাবার বাড়ি থেকে বিচ্ছেদ আমার হচ্ছে না এই আনন্দেই আমার কান্না পাচ্ছে না।
উল্টো ভীষণ হাসি পাচ্ছে।
তবুও আমি কান্না করার ট্রাই করছি। তার আগেই বাবা ধমকে উঠলো।
এই তোর আর কান্না করতে হবে না।
মা বলে উঠলো এজন্যই বলেছিলাম মেয়েকে পাশের বাড়িতে বিয়ে দিও না।
শ্বশুর বাড়ি আর বাপের বাড়ি একসাথে হলে এটাই হয়।
খুব ইউনিক ভাবে আমার কনে বিদায় হলো। শ্বশুর বাড়ি আসার আগে আমার বাসার লোকদের শেষ কথা ছিলো নিম্নরূপ।
আপা, জলদি রাশেদ ভাইয়ার বাসায় যা তো।
বন্ধুদের সাথে গেট টুগেদারের প্লানিং করতে হবে।
(সোহান) উফ, আমার সিরিয়ালের টাইম হয়ে আসছে।
(মা) রেহানা, আমার জন্য এক কাপ চা বানাও তো। খুব মাথা ধরেছে।
বাবা বৌমা, কান্না করে আমার গলা টা ব্যথা করতাসে। আমার জন্যও এক কাপ আদা চা বানিও।
আমি থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমার কি আসলেই বিয়ে হয়েছে আর সত্যি ই আমার কনে বিদায় হচ্ছে? কবুল তো বললাম।
সোহান কে বললাম শোনো আমরা বিয়ের পর বিদেশ চলে যাব।
কি বলো! আমার বাপ দাদার ভিটা ছেড়ে বিদেশ যাব কোন দু:খে।
চুপ করো। তোমাকে কে বলেছিলো আমার বাড়ির সামনেই তোমাকে বাসা বানাতে? আমার যে কনে বিদায় হচ্ছে কাউকে দেখে মনেই হচ্ছে না।
আরে আজব! বাসা কি আমি বানিয়েছি নাকি?
হয়েছে, এখন চলো। এত ভারী শাড়ি গয়না পড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না।
হ্যাঁ, চলো।
এরপর সবার উদ্দেশ্যে বললাম আন্টি আর আংকেল রা কনে বিদায় শেষ।
আপনারা বসেন, আমি শ্বশুর বাড়ি থেকে এই শাড়ি টা পাল্টে আসতাসি। জমিয়ে আড্ডা হবে।
নাহ, ডিসিশন ফাইনাল। এরপরের বার বিয়ে করলে পাশের বাড়িতে করবো না।