Hi I'm WriterMosharef
ভালোবাসিস বলিস নি কেন?
বললে হয়তো ভাবতি করুনা করছি।
একবার বলেই দেখতি অন্তত বোঝানোর চেষ্টা তো করতে পারতি।
অনেক বার বুঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তুই বুঝিস নি। কথার ছলে, হাসির ছলে অনেক অনেক ভাবে চেষ্টা করেছি, তুই বুঝিস নি।
ভার্চুয়াল এও চেষ্টা করেছিলাম। মনে আছে? প্রায় সময় ই তুই আমি প্রেমিক প্রেমিকার মত ফোনালাপ করতাম।
আমি সেগুলা সিরিয়াসলি-ই নিতাম। কিন্তু তুই শুধু ফান ই ভাবতি।
একবার অন্তত আমার অনুভুতিটা জিজ্ঞেস করে দেখতি, তখন কি ফিল করতাম।
সাহস হয় নি।
তুই এত ভিতু কেন?
তুই অনেক সাহসী যে।
তারপর দুজনের ভিতরে নিরবতা বিরাজ করলো।
কথা হচ্ছে ভার্সিটি লাইফের দুই বেস্ট ফ্রেন্ড এর মাঝে।
যারা এতদিন দুই জন দেশের দুই প্রান্তে কর্মে ব্যাস্ত ছিলো। মেয়েটি কালো সুন্দরী। কালো বলে সুন্দরী কেন বলছি? মেয়েটি কালো হলেও সুন্দরী এমন টা ছেলেটির ধারনা।
মেয়েটির নাম আয়াত, আর ছেলেটি হচ্ছে সিয়াম। দুই জনেই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরনের লক্ষে ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার লড়াই এ সফল হয়ে তাদের খুশির শেষ ছিলো না।
কিন্তু গায়ের রঙ কালো হওয়াতে মেয়েটির সাথে হাতে গোনা দু' একজন ছাড়া কেউ বন্ধুত্ব দুরে থাক, কথাও বলতো না।
যারা বলতো তাও শুধু মেয়েটার ভালো মেধা ছিলো তাই।
কিন্তু সিয়াম এর মনে হতো আয়াত মেয়েটি খুব সুন্দরি।
অন্তত মনের দিক থেকে। তাই কোন কিছু না ভেবেই বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো।
আস্তে আস্তে তাদের বন্ধুত্বটা গভীর থেকে গভীর হয়।
একে অপর কে ছাড়া যেন তারা অচল ছিলো।
হুমায়ন আহমেদ বলেছিলেন, একটা ছেলে আর মেয়ে কখনই বেশি দিন বন্ধুত্বে থাকতে পারে না। একজন না একজন প্রেমে পরবেই।
সিয়াম এর বেলাতেও তাই হলো। আয়াত এর মায়া ভরা মুখ, গোছানো কথা বার্তা, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সততা, এসব এর প্রেমে সিয়াম পড়ে গেলো।
কিন্তু ভয়ে বলতে পারতো না, একে আয়াত এর গায়ের রঙ কালো।
তাই আয়াত ভাবতে পারে তার উপর করুনা করছে।
আর দ্বিতীয় তো যদি বন্ধুত্বটাও নষ্ট হয়ে যায়?
ভার্সিটির সিনিয়র একটা কবি টাইপের ছেলে আয়াত কে প্রপোজ করছিলো। সে আয়াত এর রূপের অনেক প্রশংসাও করে। জবাবে আয়াত বলেছিলো আপনি কাব্যিক মানুষ তাই আমায় সুন্দর বলছেন, এটা শুধুই আপনার করুনা। কিছু দিন গেলেই এসব ভুলে যাবেন
আর সেই থেকে আয়াত কে ভালোবাসার কথা বলা থেকে সিয়াম বিরত থাকে।
তবে সিয়াম অনেক বার আয়াত কে পরিক্ষা করার চেষ্টা করেছে কিন্তু আয়াত এর কোন কথাতেই তার উপর ভালোবাসার ফিলিংস পায় নি। তবুও আয়াতের প্রতি তার সমস্ত ভালোবাসা ডায়েরি বদ্ধ করতে কখন ও সিয়াম এর মিস যেতো না। আর এসব শুধু জানতো
সিয়ামের কিছু বন্ধু।
ভার্সিটি জীবন শেষ হতেই ভাগ্য ভালো থাকায় আয়াত একটা ভালো জব পেয়ে গেলো। তাই তাকে ঢাকা শহর ছাড়তে হলো।
তার ঠিক কয়েক মাস পরেই সিয়াম এর ও চাকরি হয়।
কাজের চাপে আস্তে আস্তে দুজনের মাঝে ব্যবধান বাড়তে থাকে। এক সময় সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
সিয়াম অনেকবার আয়াত কে ফোন করেছে, কিন্তু বার
বার ফোনের ওপাশ থেকে বলেছে এই নাম্বার টিতে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না।
সিয়াম কি জানতো? আয়াত এর সিম হারিয়ে গেছে।
তখন নতুন করে সিম উঠানোর ও সুযোগ ছিলো না।
এদিকে আয়াত ও অনেক চেষ্টা করেছে সিয়াম এর সাথে যোগাযোগ এর, কিন্তু পারে নি। ভার্চুয়াল থেকে তারা অনেক আগেই অবসর নিয়েছে। তাই সেখানেও পায় নি।
খুঁজতে খুঁজতে আয়াত তাদের পুড়নো এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারে সিয়াম তাকে ভালোবাসে কিন্তু বলতে পারেনি।
আজ ছয় বছর পরে অফিসের একটা মিটিং এ দু'জন দেখা। অদ্ভুত ভাবে দু'জন দুই অফিসের সিনিয়র কর্মকর্তা। মিটিং শেষে দু'জন একটা কফিশপে বসলো, তারপরেই উপরের কথোপকথন হলো।
আয়াত আবার বলতে লাগলো।
কখন ও ছেড়ে যাবি নাতো?
যেদিন দুনিয়া ছাড়বো সেদিন তোকে ছাড়বো।
একবার অন্তত ভালোবাসি বল।
ভালোবাসি বললেই ভালোবাসা প্রকাশ পায় না। চল তার চেয়ে বিয়ে করে ফেলি।
তারপর?
দুজনের একজনে জব ছেড়ে দিবো। তারপর এক সাথে থাকবো। আমি চাকরি করবো, আর তুই বসে বসে খাবি তা হবে না। আমি জব ছেড়ে দেবো। বাসায় থাকিস নাকি মেস এ? আপাদত মেস এ থাকি, আম্মু অনেক বকে। এখন থেকে বাসাতেই থাকবো।
তোর আম্মু আমায় মেনে নিবে তো? আমি যে কালো সুন্দরী। আমি বিয়ে করলেই আম্মু খুশি সে রঙ খুঁজে না, মন খুঁজে।
তবে দেড়ি কিসে চল।
শেষ কথা:
আপনি মানুষের রঙ খুঁজেন রঙ ই পাবেন। আর কিছুই না আর মানুষের মন খুঁজেন ভালো কিছু পাবেন। যার মন যত পরিষ্কার সে তত বেশি সুন্দর। আসল সৌন্দর্য মনের দিক থেকে রঙের দিক থেকে না।