Hi I'm WriterMosharef
ঘড়িতে সময় বিকেল চারটা বেজে পঁচিশ মিনিট আজ আমার Propose Day 2020 অফিস শেষ হতে আরও কিছুক্ষন বাকি।
আমি ধোয়া ওঠা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আবারও ফোনের দিকে তাকালাম।
সুপ্তির নাম্বারটা সেই সকাল থেকেই স্ক্রিনে ভাসছে।
আমি চাইছি ফোনটা এবার দেবই কিন্তু, সেই আগের মতই আটকে যাচ্ছি।
পারছি না!
আজকের দিনে সুপ্তি যে অফিস মিস দেবে আমি ভাবতেও পারিনি।
বরং ভেবেছিলাম উল্টোটা। আমার আগে ও অফিসে আসবে। আমি আসবো একটু দেড়িতে সুপ্তি আমি না আসার কারনে অস্থির হয়ে যাবে।
বারবার আমাকে ফোন দিলেও ওপাশ থেকে না করে
দেবে। আমি তো ফোনটা নিশ্চিত বন্ধ রাখবো। সুপ্তি চিন্তিত হয়ে যাবে পাগলপ্রায়।
হুট করে অফিসে এসে চমকে দেবো সুপ্তি কে শক্ত হাতে
জড়িয়ে ধরবে আমায়।
কিন্তু, এসব ভাবতেই এখন আমার মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে! আজ যে আসবে না সুপ্তি আমাকে একটু
জানানোর প্রয়োজনও মনে করেনি।
সেদিন ছিল শুক্রবার, আমার হাতে সদ্য কেনা তাজা লাল গোলাপ।
বুকে একরাশ সাহস জুগিয়ে আমিও বের হয়েছিলাম সুপ্তিদের বাসার উদ্দেশ্যে।
আজ যেভাবেই হোক আমাকে প্রপোজ করতেই হবে।
নাহলে যে আমার ঘুম আসবে না। সকালে উঠতে দেড়ি করবো অফিসে লেট হবে।
আমি যখন সুপ্তিদের বাসার সামনে গিয়ে দাড়ালাম ততক্ষনে সেখানে বেশ লোক জড়ো হয়ে গেছে। দূর থেকে কিছু বুঝতে না পারলেও এটুকু বুঝলাম সেখানে কাউকে পেটানো হচ্ছে, আর উৎসুক জনতা তা মনোযোগ সহকারেই দেখছে। আমি আরও একটু এগিয়ে গেলাম। ভীড় ঢেলে ভেতরে তাকাতেই দেখি, সুপ্তির বাবা।
লোকটা বেশ ভাল এলাকায় মোটামুটি নামডাক আছে।
আমাকে দেখেই লোকটা হাপাতে হাপাতে এসে বললো,
দেখোনা বাবা, আমার এলাকায় এসে আমার মেয়েকে ডিস্টার্ব করে আবার প্রেমের প্রস্তাব ও দেয়। তাই আজ ধরেছি ব্যাটাকে।
লোকটার কথায় আমি কি বলবো ভেবে পাইনা।
ততক্ষনে আশেপাশের লোকজন প্রায় চলে গেছে।
সেই অধম পোড়াকপালি ছেলেটাও দৌড়ে প্রায় চলে গেছে বেশ খানিকটা দূরে।
আমার চুপ থাকা দেখে লোকটা একটু দম নিয়ে বললেন, তা বাবা তুমি এখানে এসময়?
লোকটার কথায় আমি এদিক ওদিক তাকাই। সত্তি টা বললে এই মধ্যবয়সী লোকটা আমাকে মেরেও দিতে পারে।
আমি শান্ত গলায় বলি,
জ্বী চাচা, এদিকে একটা কাজ ছিল! এখন বাসায় যাচ্ছি।
ও আচ্ছা, একি হাতে আবার ফুল, কার জন্যে?
এইতো ফেসে গেলাম। এই বয়সেও লোকটার চোখের যে কোন ক্ষতি হয়নি এটা বেশ ভালভাবেই বুঝলাম।
ফুলটি লুকাতেও পারলাম না।
আমি একবার তিনতলার বেলকুনির দিকে তাকালাম।
সুপ্তি কখন এসে দাড়িয়েছে খেয়ালই করিনি। আমার অবস্থা দেখে সুপ্তি যে হাসছে এটা আমি স্পষ্টই বুঝতে পারলাম।
আমি আফজাল হকের দিকে তাকিয়ে কাপা গলায় বললাম,
জ্বী চাচা, ডাক্তার বলেছে গোলাপ জল খেতে। তাই গোলাপটা কিনলাম। পানিতে ভেজাবো আর সেই গোলাপ ভেজা পানি খাবো।
আমার কথায় লোকটা মনে হয় Confused হয়ে গেলো। আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো,
এভাবে খাওয়া যায় নাকি?
আমি আর ভয় না করে বুকে সাহস জুগিয়ে বলি,
জ্বী চাচা, যায় তো। আজ আসি একদম টাটকা খেতে হবে তো।
কথাটি বলে আমি আর দাড়াই না। লোকটা কি বলবে তার ও অপেক্ষা করি না।
তবে আড়চোখে আরও একবার বেলকুনির দিকে
তাকাই। আমার তাকানো দেখে মেয়েটার হাসি যেন আরও একটু বেড়ে গেলো। আমি আর সেদিকে তাকাই না দ্রুত পায়ে হাটি।
সেদিনের ঘটনার পর আমি আজ কিভাবে মেয়েটাকে প্রপোজ করবো সেটা ভেবেই হাত পা কাপছে। অবশ্য সুপ্তি যে আমাকে পছন্দ করে না তেমন নয়। পছন্দ না করলে গতকাল অবশ্যই গোলাপ টা আমাকে দিতো না।
আমি আর দেড়ি করি না উঠে দাড়াই।
আমি চেয়ার ছেড়ে উঠতেই ফোনটা বেজে ওঠে। আমি একবার টেবিলে রাখা ফোনটার দিকে উকি দেই।
যে নাম্বারে ফোন দেওয়ার জন্যে সেই সকাল থেকে চেষ্টা করছি সেই নাম্বার থেকে ফোন আসায় আমার ঠোটের কোনে মুচকি হাসির রেখা ফুটে ওঠে।
আমি আর দেড়ি করি না। ফোনটা ধরতেই সুপ্তি বেশ রাগ মাখা কণ্ঠে বলে,
আপনি কি আমাকে কিছু বলতে চান?
সুপ্তির এমন প্রশ্নে আমি কিছুটা অবাক হই। কিভাবে জানে! আমি ওকে কিছু একটা বলতে চাই।
তবে এভাবে যদি কিছু বলতে চাই সেটাও বুঝে নিত তাহলে খুব একটা মন্দ হতো না। আমি এবারও সুপ্তিকে
কিছু বলতে পারিনা। একটু চুপ থেকে বলি,
আজ অফিসে আসলেন না যে?
সুপ্তি আমার কথায় কিছু বলে না। চুপ করে আছে সুপ্তি আরও কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,
এটা ই আপনার না বলা কথা?
সুপ্তির কথায় আমি ছোট্ট করে "হুম" বলতেই মেয়েটা ফোনটা কেটে দেয়। আমি ফোনটা কান থেকে নামাই না। আজ নিজেকে সত্তি ই গর্দভ মনে হচ্ছে।
নাহ! আমাকে দিয়ে হবে না।
আমি ঠান্ডা চায়ের কাপে আরও একবার চুমুক দিয়ে মনে সাহস সঞ্চার করি। ফোনটা হাতে নিয়ে সুপ্তিকে একটা মেসেজ দেই।
আমি চাই না তোমার বাবা রাস্তায় ফেলে আমাকে পেটাক। আমি চাই অফিস থেকে দেড়িতে ফেরায় তুমি নিজেই আমাকে তোমার ভালবাসার লাঠিতে পেটাও।
যেটাতে কোন ব্যাথা লাগেনা লাগবে শুধু ভালবাসা।
আমার মেসেজের রিপ্লে আসে প্রায় আধ ঘন্টা পর।
বেশ ছোট্ট করে লেখা,
এসব পেটানোতে আমার ভয় লাগে। আমি চাই তোমার টাটকা গোলাপ ভেজানো জল খেতে সবসময় সবকিছু
তেই সারাটাজীবন।
সুপ্তির মেসেজে আমি মুচকি হাসি।
এ হাসি বলে দিচ্ছে আজ আমি পেরেছি। কিছু একটা হলেও করেছি। যতটা গর্দভ নিজেকে ভাবতাম সেই বিশ্বাসটুকুও উঠে গেছে এখন।
আমি চেয়ার টেনে হুট করে বসে পড়ি আর মনে মনে বলি,
অবশেষে আমি তাহাকে পাইলাম।