বাসর রাতের রোমান্টিক গল্প

 

বাসর রাতের রোমান্টিক গল্প, বাসর রাতের রোমান্টিক প্রেমের গল্প, বাসর রাত, বাসর রাতের গল্প, রোমান্টিক বাসর রাতের গল্প, বাসর রাতের রোমান্টিক দৃশ্য, basor rater romantic golpo,

জানালার লালচে পর্দাটা সরাতেই একরাশ এলো হাওয়া অলির এলো চুলকে আরো এলোমেলো করে দেয়।


পূর্ব দিকের এই জানালাটা অলির বড্ড প্রিয়, রোজ ঘুম থেকে উঠে আলতো সূর্যের চুম্বন মুখে না মাখলে সারাটাদিন খারাপ যাবে বলে অলির মনে হয়।


এইখানেই অলির সামান্য বিলাসিতা একটু নিজের সাথে আলাপন তারপর ইঁদুর দৌড় ব্যস্ততা।


আজ অলির জন্মদিন, মনে মনে ৫টা বছর পিছিয়ে গেল অলি, নিজের অজান্তেই কয়েক ফোঁটা জল নেমে এলো চোখ দিয়ে।


বিয়ের আগের জন্মদিন গুলো কাটতো অরির সাথে।


কী পাগলামোটাই না করতো অরি এই দিনটাতে, রাত ১২ টার সময় উইশ, সারাদিন ফোন, এই দিনটাতে অরির প্রোফাইল পিকে থাকতো শুধু অলি।


অরি, মানে অরিজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সাথে অলির আলাপ ফেসবুকে।


ফেসবুক থেকে বন্ধু, বন্ধু থেকে ভালোলাগা, ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা।


Happy birthday, sweetheart.  many many happy returns of the day.


চমকে ওঠে অলি, তুমি?


হ্যা বলেই রাকেশ পেছন দিক থেকে অলিকে জড়িয়ে ধরে। আমি ছাড়া কে হবে শুনি? কেন, অন্য কাউকে প্রত্যাশা করেছিলে বুঝি?


সবসময় মশকরা,  অভিনীত রাগে অলি নিজেকে আলিঙ্গন মুক্ত করে ফেলে।


রাকেশ আলতো করে অলির ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে বলো প্রাণের রাণী, কী গিফট লাগবে তোমার?


 আবার? আবার শুরু করলে?

 

রাজ্যের কাজ পড়ে আছে নীচে, ছাড়ো বলছি।


অলি দৌড়ে নীচে নেমে যায়।


রাকেশ সিগারেট হাতে দাঁড়িয়ে থাকে জানালায়।


দুপুরে হাতের কাজ সেরে নিজের রুমে এসে পুরোনো ডায়রি টা বের করে।


আঁচল দিয়ে মুছে অনেকক্ষণ বুকে জড়িয়ে রাখে ডায়রি টা।


নীচের ঘড়িতে ঢং ঢং করে তিনটে ঘন্টা পড়তেই ঘোর কাটে অলির।


ও মা তিনটে বেজে গেল, রাকেশকে ফোন করতে হবে তো।


'হ্যালো, খেয়েছো তুমি?


হুম, পাগলি কাজ করছি।


ফোন কেটে যায়।


এক এক সময় অলির মনে হয়, পুরোটাই নাটক।


রাকেশকে ভালোবাসা টাও নাটক একটা।


এতো অবহেলা, এতো অপমানের পরও অরির জায়গা টা এখন ও অরির ই আছে।


ফাইনাল ইয়ারের শেষ পরীক্ষার দিন কলেজের

গেটে অরির পাক্কা চার ঘন্টা  দাঁড়িয়ে থাকা, চোখের কোনের সেই অভিমান মাখা দৃষ্টি।


ফোনটা আবার বেজে ওঠে অলির।


অচেনা নং, ধরবো কী ধরবো না ভাবতে ভাবতেই ফোন টা কেটে যায়। আবার বেজে ওঠে।


হ্যালো,

শুভ জন্মদিন ভালো আছো?

কে বলছেন?


চিনতে পারছো না, অলি? আমি অরি।


অলি চমকে ওঠে, তুমি? তুমি নং কীভাবে।


অলির কথা আটকে যায়,

না, দুর্বল হলে চলবে না, অলি এক ঢোকে টেবিলে রাখা গ্লাসের পুরো জলটা খেয়ে গম্ভীর ভাবে বলে।


হঠাৎ ফোন করলে?

এমনি,

আচ্ছা,


আলি? চলো না আবার নতুন করে শুরু করি।


আমি বিবাহিত, অরিজিৎ।


হুম, এখনো তোমারই জন্য পাগল আমি।


অলি ফোন টা কেটে দিয়ে নাম্বার টা ব্লক করে দেয়।


পাঁচ বছর আগে, ঠিক এমনই কথা বলেছিল অলি।


অরি সেদিন শোনে নি।


অলির অন্যায় অলি, অরিকে বিয়ে করতে চেয়েছিল, স্বপ্ন দেখেছিল।


অরি চায় নি, নানান অজুহাত দেখিয়েছিল

অথচ অরি প্রতিষ্ঠিত একটা বেসরকারি অফিসের উচ্চপদস্থ কর্মচারী ছিল।


অলি আজ ও ভেবে পায় না, কেন অরি তাকে সেদিন প্রত্যাখ্যান করেছিল, অলি একটু মোটা বলে?


সামান্য ঘরোয়া মেয়ে বলে?


অলির একটা কিডনি অচল বলে?


নকি একমাত্র কারণ সেই ঘটনাটা।


বৌমা, একটু নীচে এসো, সারাক্ষণ কী যে করো, সবকিছু বলে বলে করাতে হয়।


অলি মুখে কিছু না বলে তাড়াতাড়ি নীচে যায়।


 

বাতের ব্যথা টা আবার বেড়েছে, একটু পা টা মালিশ করে দাও তো।


পারবে তো? নাকি মানে লাগবে?


না মা দিচ্ছি।


কী জানি বাপু, তোমার বাবা ৮ লাখ টাকা দিয়ে আমার রকুর চাকরি টা করে দিয়েছে বলে তোমার তো আবার মাটিতে পা পড়ে না।


বলি, তোমার তো ওই একটা কিডনি, কে বিয়ে করতো শুনি? আর ওই তো রূপের ছিরি।


সরকারদার মেয়েটা কী সুন্দর ছিল, রকু যে কী দেখে বিয়ে টা করলো, তাও যদি সতী হতে, বিয়ের আগেই তো, ছিঃ ছিঃ, কী ঘেন্না, কী ঘেন্না।


ব্যথা টা একটু কমেছে, মা?


কমেছে, তা, যা বললাম, সত্যই বলেছি বাপু ছেলেটার আবার কান ভাঙিও না।


এসব মিচকেপোড়া মেয়েমানুষ কে একদম পছন্দ করি না আমি।


অলি মাথার ঘোমটা টা ঠিক করে বেরিয়ে গেল।


অথচ বিয়ের আগে শাড়িট পরতেই  পারতো না অলি, মাকে জড়িয়ে ধরে শুধু বলতো মা, আমি কিন্তু বিয়ের পর ও জিন্স আর টপ পরবো আর ওই শাঁখা, পলা, ওসব পরতে পারবো না একদম।


অলি ছাদে উঠে আসে, আম ডালের ছাওয়ায় দাঁড়িয়ে আবার পাঁচ বছর পিছনে চলে যায়।


কলেজের গেট, অরির সাথে প্রথম দেখা, পুরানো আম বাগান, আর সেই ঘটনাটা।


অলির মাথা ঘুরে যায় ভাবতেই।


সেদিন ফাইনাল ইয়ারের শেষ পরীক্ষা শেষে অরির সাথে ঘুরতে ঘুরতে বেশ দেরী হয়ে গিয়েছিল তাই শর্টকাট অন্ধকার একটা রাস্তা বেছে নিয়েছিল অলি বাড়ি ফেরার জন্য।


এই যে মামনি, তা ছেলেটা কে ছিল শুনি?


খুব তো লটরপটর করলে, তা আমাদের ও একটু খেতে-টেতে  দাও, দেখি একটু সেক্সি বলেই তিনজন তিন দিক থেকে আর ভাবতে পারে না অলি।


সেদিন অলিকে ভোরে নদীর ধারে অর্ধনগ্ন হয়ে পড়ে থাকতে দেখে রাকেশ।


রাকেশই জ্ঞান ফিরিয়ে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিল।


অলি সবটা অরিকে জানিয়েছিল ভিডিও কলে।


না, সেদিন অরি পাশে থাকে নি, কান্না থামায় নি, সারা শরীর জ্বরে পুড়ে গেলেও কোন চিন্তা হয় নি অরির।


অরি ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ  সমস্ত জায়গায় ব্লক করে দিয়েছিল অলিকে।


এই অলি,


রাকেশের ডাকে চমকে ওঠে অলি।


ওমা কখন এলে অফিস থেকে, কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি, চলো নীচে চলো কথা থেমে যায় কারণ তখন অলি রাকেশের দু বাহুর বন্ধনে বন্দি।


কী হয়েছে অলি? আবার সেইসব ভাবছো? কতবার বারণ করেছি, বলেছি না আমি তো আছি।


অলি কিছু বলতে যাবে ওমনি ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট বন্ধ করে দেয় রাকেশ, কানের কাছে মুখ এনে রাকেশ ফিসফিসিয়ে বলে, তোমার প্রিয় গোলাপে বিছানা সজ্জিত রাণী, ফুলশয্যার দিন তো ফিরিয়ে দিয়েছিলে, আজ ও কি ফিরিয়ে দেবে?


নাকি, আজ আমাদের প্রথম ফুলশয্যা হবে?


লজ্জায় অলি মুখ লুকায় রাকেশের বুকে।


দূরে কোথায় যেন বেজে ওঠে প্রাণ চায় চক্ষু না চায়।

Previous
Next Post »